Wednesday, October 12, 2011

দুই সূর্য্য ও এক গ্রহ (টাটুইন)

সুবিশাল এক কালো পরদা। তার গায়ে লক্ষ লক্ষ জোনাকি মিটিমিটি করে জ্বলছে। তাদের কেউ কেউ একটু বেশি উজ্জ্বল, কেউবা নিস্প্রভ। কেউ সাদা আলো দিচ্ছে, কেউবা নীল আলো। হয়ত কোনটা আবার জ্বলা-নেভা করছে। এমনি এক তারা ভরা রাতে কখন, কোথায়, কার মনেই বা সর্বপ্রথম ওই সুদূর নক্ষত্রের রহস্যময় বর্ণীল জগতকে দেখে বিশ্বজগতকে জানার তীব্র কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছিলো তা আজ আর জানা বেশ দুস্কর। হয়তো কোন তারা ভরা রাতে মহাসাগরে ভেলা ভাসিয়ে অজানার পথে ছুটতে ছুটতে হঠাৎ কোন জোনাকির খসে পরা দেখে তার মনে প্রথম অজানাকে জানার কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছিল। আন্তঃনাক্ষত্রিক কল্পনায় ভাসতে ভাসতে একসময় মানুষ অজানাকে জানার, অচেনাকে চেনার কৌতূহলে একসময় সভ্যতার সূচনা হল। মানুষ তার অনেক কৌতূহল পূরণ করেছে। কিন্তু সেই আদি ও অকৃত্রিম সৌন্দর্য মণ্ডিত কালো পর্দার গায়ে লাখো জোনাকির আবর্তন আজো তার মাথায় ঘুরপাক খায়। এরি মাঝে মহাকাশ ও নক্ষত্রদের নিয়ে তৈরি হয়েছে হাজার হাজার উপকথা।

হলিউড সিনেমা 'স্টারস ওয়ারস'-এর গ্রহ 'টাটুইন'র সঙ্গে মিল রয়েছে কেপলার ১৬বি'র। জর্জ লুকাসের সিনেমায় 'টাটুইন' গ্রহের 'লুক' ও 'অ্যানাকিন স্কাইওয়াকার' নামে দুটি সূর্য (নক্ষত্র) ছিল। এ জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এ গ্রহকে 'টাটুইন' নাম দিয়েছে। 



ছায়াপথ মিল্কিওয়েতে পৃথিবী সদৃশ গ্রহের সন্ধানে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে কেপলার টেলিস্কোপ। গত বৃহস্পতিবার (১৫.০৯.২০১১) নাসা জানায়, তাদের কেপলার টেলিস্কোপের ধরা পড়েছে পৃথিবী থেকে ২০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত সাইগনাস নক্ষত্রপুঞ্জের এ গ্রহটি। নাসা এ গ্রহের নাম দিয়েছে কেপলার ১৬বি। গ্রহ একটি। কিন্তু দিনে দুইবার সূর্যোদয়, দুইবার সূর্যাস্ত! কখনো প্রথমে কমলা রঙের আবার কখনো লাল রঙের সূর্যোদয় হয়। সূর্যাস্তের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। অতীতে ধারণা ছিল, দুই সূর্য প্রদক্ষিণ করে এমন গ্রহের অস্তিত্ব রয়েছে। দুই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এমন গ্রহের সন্ধান এটিই প্রথম। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর সঙ্গে মিলে গেছে বাস্তবতা। 

আমাদের সৌরজগতের শনি গ্রহের সমান আকারের কেপলার-১৬বি শিলা ও গ্যাসে পূর্ণ একটি গ্রহ। শনির মতো বসবাসের জন্য উপযোগী নয় গ্রহ কেপলার-১৬বি। কেপলার-১৬বি'র দুটি সূর্যই আমাদের সূর্যের চেয়ে ছোট। বড় সূর্যটির রং হলুদ এবং এটি আমাদের সূর্যের আকারের ৬৯ শতাংশ। লাল রঙের অন্য ছোট সূর্যটি আমাদের সূর্যের আকারের ২০ শতাংশ। গ্রহটির তাপমাত্রা মাইনাস ১০০ থেকে ১৫০ ফারেনহাইট। কেপলার-১৬বি ৬ কোটি ৫০ লাখ মাইল দূরত্বের দুই সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ২২৯ দিন।

নাসার দূরবীক্ষণযন্ত্র দিয়ে গ্রহ খোঁজার লক্ষবস্তু অনুসন্ধান

নাসার গ্যালাক্সি ইভোলিউশন এক্সপ্লোরার  উপগ্রহ দিয়ে বর্তমানে জ্যোতিঃবিজ্ঞানীরা নিকটবর্তী,ঝাপ্সা নক্ষত্র বা তারা সনাক্ত করার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করছেন। এই পদ্ধতির মাধ্যমে আমাদের সৌর জগতের বাইরে অবস্থিত গ্রহ খুঁজে বের করা সুবিধাজনক হবে।


জ্বলজ্বলে তারার জন্য দূরের পৃথিবী খোঁজা কষ্টকর,এবং অনেকটাই অসম্ভব। যার জন্য এ যাবৎকালে মাত্র অল্প কিছু দূরস্থ গ্রহের ছবি তুলে উপস্থিতি নির্ণয় সম্ভব হয়েছে। ছোট,সদ্য জন্ম নেয়া তারাগুলো কম উজ্জ্বল,তাই এদের উপস্থিতিতে দূরের গ্রহ দেখা যায়। কিন্তু এসব ছোট তারা অধিক পরিমাণ অতিবেগুনী রশ্মি বিকিরণ করে।

গ্যালাক্সি ইভোলিউশন এক্সপ্লরার  উপগ্রহ এমনভাবে বানানো হয়েছে যে,তা পৃথিবীর কাছে অবস্থিত ছোট তারা থেকে বিকিরিত অতিবেগুনী রশ্মি সনাক্ত করতে পারে। এসব ছোট তারাকেই পরবর্তীতে সৌর জগতের বাইরে গ্রহ খোঁজার জন্য লক্ষবস্তু হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
প্রাপ্তবয়ষ্ক তারার চেয়ে ছোট তারা থেকে অধিক পরিমাণ শক্তিশালী রঞ্জন-রশ্মি ও অতিবেগুনী রশ্মি উদ্গীরণ হয়। অনেক ক্ষেত্রে এসব ছোট তারা গোলমাল সৃষ্টি করে,ফলে তাদেরকে সহজেই সনাক্ত করা যায়। আবার,কিছু অতিক্ষুদ্র ও নিঃশব্দ তারা আছে,যাদেরকে শুধুমাত্র রঞ্জক রশ্মি দিয়েই সনাক্ত করা যায়।
ইতোমধ্যে গ্যালাক্সি ইভোলিউশন এক্সপ্লোরার  উপগ্রহটি অতিবেগুনী রশ্মি দিয়ে আকাশের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ স্ক্যান করে ফেলেছে । দূরবীক্ষণযন্ত্র থেকে প্রাপ্ত পাঠকে আলোক ও অবলোহিত তথ্যের সাহায্যে বিশ্লেষণ করে গবেষকরা  ১৭টি কমবয়সী তথা তরুণ তারার উপস্থিতি নির্ণয় করেছেন। এসব কম ভরের তারাদেরকে বিজ্ঞানীরা “রেড ডোয়ারফ” নামে অভিহিত করেছেন। তথ্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে,এরা প্রায় ১০০ মিলিওন বছর থেকে এরূপ তারুণ্যে আছে।
নানাভাবে এই তারাগুলো বহিঃগ্রহ অনুসন্ধানে সহায়তা করে। তাদের তারুণ্য এই প্রমাণ করে যে,তাদের আশেপাশে উষ্ণ ও অধিক উজ্জ্বল নব-গঠিত গ্রহ আছে;যেখানে হয়ত অদূর ভবিষতে বসবাস করা সম্ভব হতে পারে।

শুক্র গ্রহ-পৃথিবীর জমজ ও সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ।

শুক্রগ্রহ (Venus): শুক্রগ্রহ সৌর জগতের দ্বিতীয় গ্রহ। এটি  224.7 দিনে সূর্যকে একবার প্রদিক্ষন করে। সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশে এবং ভোরের পূর্ব আকাশে আমরা শুক্রগ্রহকে তারার মতো দেখি। কিন্তু এটি একটি গ্রহ।


এটি সূর্য উঠার সময় এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় বেশি উজ্জ্বলতা পায়। তখন একে আমরা দেখি। তাই একে Morning Star বা Evening Star বা শুক তারা বলা হয়।


যারা কম্পিউটাররে সামনে থেকে উঠে বা কাজ পেলে রেখে  এ সব প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পারেন  না তারা উপরের চিত্র দেখে একটু মনের স্বাদ মেটান। চাদের পাশে দেখুন ছোট্ট একটি বিন্দু এটি ই শুক্র গ্রহ।

রাতের আকাশে চাদের উজ্জ্বলের পর এর উজ্জল্য বেশি। এটি সূর্য থেকে ১০.৮২ কোটি কিলোমিটার আর পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

শুক্র পৃষ্ঠের কাছাকাছি চাপ ও তাপ অনেক বেশি  এর তাপমাত্রা 47.8


Venus মানে হলো ভালোবাসার দেবী। তবে শুক্র হলো গ্রহ বিপর্যয়ের একটি উদাহরণ। প্রচণ্ড তাপ, আবহমণ্ডলের চাপ, ক্ষতিকর গ্যাস, আতঙ্কজনক বর্ষণ, লালাভ উজ্জ্বলতাসহ শুক্রকে দেখলে ভালোবাসার দেবী মনে না হয়ে বরং নরকই মনে হয়।শুক্রগ্রহ বাইরের জগতের কাছে পুরু মেঘের ও বিষাক্ত আবহমণ্ডল দ্বারা সম্পূর্ণভাবে ঢাকা।






রাডারে দেখা শুক্র গ্রহ।

 গবেষণায় জানা গেছে, শুক্রগ্রহের পাহাড়-পর্বত থেকে এক ধরনের রাডার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়, যা কোনোক্রমে শিলারাশি থেকে প্রতিফলিত হওয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের রাডার তরঙ্গ কেবল বরফাবৃত্ত বা ধাতব পদার্থে মোড়ানো ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত হওয়া সম্ভব। কিন্তু শুক্রগ্রহে প্রচণ্ড তাপের কারণে বরফের অস্তিত্ব অকল্পনীয়।



 এছাড়াও গ্রহের ভূমি সমতল থেকে ৩ মাইল উঁচু পাহাড়-পর্বত থেকে প্রতিফলিত রাডার তরঙ্গ বেশি শক্তিশালী। এসব তথ্য বিশেল্গষণ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন শুক্রগ্রহের এসব পাহাড়-পর্বত ধাতব পদার্থে আবৃত। শুক্রগ্রহের ওপর তোলা ছবি দেখলেও ধাতবপৃষ্ঠে আবৃত পাহাড়-পর্বতের ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

নাসার বিজ্ঞানীরা মনে করেন, শুক্র গ্রহেও নাকি এক সময় প্রাণের অস্তিত্ব ছিল।  পৃথিবীর মতো শুক্র গ্রহে ও  সমুদ্র ও নদী ছিলো। ১৯৯০ সালে মহাকাশে পাঠানো নাসার মহাকাশ যান “Magellan”' শুক্রগ্রহ পৃষ্ঠের যে সব ছবি পাঠিয়েছিল সেই ছবিগুলোতে নদীর প্রবহমান খাদের মতো অসংখ্য শুকনো ও মরা চ্যানেল লক্ষ্য করা যায়।

 

ছবিগুলো দেখে প্রাথমিক ভাবে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের ধারণা হয়েছিল আজ থেকে ৫ লক্ষ বছর আগে শুক্র গ্রহ পৃষ্ঠে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে যে বিপুল পরিমাণে লাভার উদীরণ ঘটে ঐ লাভা স্রোতের ফলেই চ্যানেলগুলোর সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞানীদের এই ধারণার পক্ষে আরও যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে সালফিউরিক এসিড যুক্ত ঘন বায়ু মণ্ডলের এই গ্রহের বর্তমান তাপমাত্রা ৪০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস যা প্রাণ সৃষ্টি বা প্রাণধারণের ও বিকাশের কোন সম্ভাবনাই নাই। কিন্তু কম্পিউটার প্রযুক্তির বিকাশ ও উন্নতির কারণে শুক্রগ্রহ পৃষ্ঠর ছবিগুলো নতুন করে পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। নতুন পর্যালোচনায় বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, শুক্রগ্রহ পৃষ্ঠে যে মরা বা শুকনো চ্যানেলগুলো রয়েছে সেগুলো খুবই দীর্ঘ। বিজ্ঞানীদের ধারণা লাভা স্রোতের কারণে এত দীর্ঘ চ্যানেল হওয়া সম্ভব নয়। তবে পানি প্রবাহ বা নদী প্রবাহের জন্য এত দীর্ঘ ও লম্বা চ্যানেল হওয়া সম্ভব। তাই বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন শুক্রগ্রহেও এক সময় প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল। তবে শুক্রগ্রহ পৃষ্ঠ খুবি শুষ্ক।

Project Magellan   দ্বারা ১৯৯০-১১৯১ শুক্র গ্রহ পূর্ণ ভাবে ম্যাপিং হয়। শুক্র গ্রহ পৃথিবীর মত স্থলজ গ্রহ। এটির দৈহিক গঠন পৃথবীর মত শক্ত ।এর ভর পৃথিবীর ০.৮২ গুণ আর ব্যাস পৃথিবীর ০.৯৫ গুণ। এর গড় ঘনত্ব ৫.১ যা পৃথিবীর ঘনত্বের চেয়ে সামান্য কম। এটি গঠন পৃথিবীর গঠনের মত।এটাকে অনেক সময় পৃথিবীর বোন বা যমজ বলা হয়। এর বায়ুমণ্ডল প্রধানত কার্বনডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন দিয়ে গঠিত।কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ শতকরা ৯৬.৫% আর নাইট্রোজেনের পরিমাণ শতকরা ৩.৫% মাত্র। এতে অতি সামান্য পরিমাপ জলীয়বাষ্প, আর্গন, কার্বন মনোক্সাইড প্রভৃতি আছে।কার্বনডাই-অক্সাইড ও জলীয়বাষ্প থাকার দরুন শুক্রের মতো পৃথিবীরও একটি গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া আছে।

এবার শনি গ্রহ দেখার পালা

আমরা প্রায় সকলেই জানি শনিগ্রহের বলয় বা রিং এর কথা। এই বলয় ঘিরে শোনা যায় অনেক কথা। আর এই বলয় বা রিং এর জন্যই শনির এই মহনীয় রূপ। মনে করা হয় সূর্য পরিবারের সমস্ত গ্রহগুলির মাঝে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন গ্রহ এই শনি। আজ যে কারণে শনির কথা উঠলো তাই বরং বলি এখন।


সূর্যের চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে তার গ্রহগুলি সর্বদাই তাদের নিজের অবস্থা পরিবর্তন করছে। এই অবস্থা পরিবর্তনের ফলে মাঝে মাঝে এমন একটি অবস্থায় এসে যায় যখন পৃথিবী থেকে কোনো একটি গ্রহ বা অন্য কোনো খ-বস্ত খুব ভালো ভাবে দেখা যায়। যেমন কিছু দিন আগেই দেখা গিয়েছিলো সুপারমনু। সেই সময় আমি “চাঁদ দেখার আয়োজন” করে ছিলাম। এবার আবার শনি গ্রহ এমন একটি অবস্থানে এসেছে, যাতে পৃথিবী থেকে তাকে খুব সুন্দর দেখা যাবে। গত ৪ এপ্রিল থেকে এই সুযোগ শুরু হয়েছে। আরো ভালো ভাবে বলতে গেলে শনি গ্রহটি প্রতি ৩৭৮.১ দিন পরপর সুর্যের বিপরীত দিকে অবস্থান করায় পূর্ব দিগন্তে খালি চোখে দেখার সুযোগ তৈরি হয়। গত বছর এই ঘটনা ঘটেছিলো ২২শে মার্চ আর আগামী ২০১২ সালে ঘটবে ১৫ই এপ্রিল এবং ২০১৩ সালে হবে ২৮শে এপ্রিল।
 
আকাশে মেঘের দল হামলা চালাচ্ছে কদিন যাবতই, তাই গতকাল দেখার সুযোগ হয়নি। আজও আকাশের মুখ ভার, তাই একটু পরিস্কার হলে আজ রাতে একবার চেষ্ঠা করবো। যদিও ১৪৪মি.মি. টেলিস্কোপে খুব একটা সুন্দর দেখা যাবে না, একটি ছোটো আলোক বিন্দু ছাড়া।

তবে আপনারা চাইলে খালি চোখেই দেখতে পারবেন। খুব সহজেই খুঁজে পাবেন শনিকে Virgo বা কন্যা রাশিতে। যারা কন্যারাশি চিনেন তারা কন্যারাশির সবচেয়ে উচ্চল তারা চিত্রা বা Spica তারা একটু উপরেই উজ্জ্বল শনি গ্রহকে খুঁজে পাবেন।

আর যারা কন্যারাশি চিনেন না তাদের জন্য একটি গাইড লাইন-
প্রথমে উত্তর দিকে মুখ করে তাকান। একটু ডান দিকে একটু উপরের দিকে দেখতে পাবেন Ursa Major বা বৃহৎ ভালুক মন্ডলের অন্তগত সপ্তর্সী মণ্ডল। এটি ভালুকের লেজে। সপ্তর্সী মণ্ডলের শেষের ৪টি তারাকে অর্ধবৃত্ত আকারে বাড়িয়ে নিন নিচের দিকের Bootes বুটিস মণ্ডলের উজ্জ্বল তারা স্বাতী বা Arcturus পর্যন্ত। এবার এই বৃত্তচাপটিক আরো বাড়িয়ে নিলে পৌছে যাবেন Virgo বা কন্যারাশির Spica চিত্রা তারাতে। এবার চিত্রার একটু উপরেই দেখতে পাবেন শনি গ্রহটিকে। নিচে তিনটি ছবির মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্ঠা করা হলো।


০১।

দৃশ্যপটের সবগুলি তারামণ্ডরের কালপনিক রেখা ও নামসহ উজ্জ্বল তারাগুলির নামও দেয়া আছে। আমাদের আলচ্য বুটিস আর কন্যা রাশিকে দেখতে পাবেন ছবির বাম দিকে।

০২।

এবার শুধু উজ্জ্বল তারা ও শনিগ্রহকে দেখানো হলো।

০৩।

এই ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন কি করে শনিকে খুঁজে বের করবেন।

তাঁরা পরিচিতি ০১

সেই সে অতি প্রাচীন কাল থেকেই আকাশের তারাদের দিয়ে নানা প্রকারের ছবির কল্পনা করেছে মানুষ। আদি কালের যাযাবর জাতীর যাযাবর লোক খোলা আকাশের নিচে তাদের পালিত গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি রাতের পর রাত পাহারা দিতে দিতে আকাশে ফুটে থাকা অসংখ্যা অগুনিত তাঁরাদের দেখে দেখে এঁকেছে তাদের কল্পনার ছবি তাঁরাদেরই নিয়ে। নিজেদের আকা তাঁরাদের সেই সব ছবি নিয়ে দিনের বেলা হয়তো তারা কত গল্প করতো। রাতের আকাশের তাঁরার মেলাতেই দেখা দিয়েছে তাদের মেষ, বৃষ। যাযাবর যুবকের চোখে তার প্রিয়াও তাঁরাদের মাঝেই স্থান করে নিয়েছে, শস্য চয়নরতা কন্যারাশি তারই স্বাক্ষী।আরো আছে মিথুন রাশি। কিন্তু কিভাবে শুরু হয়েছিলো ছবি আকার এই খেলা তা কেউ বলতে পারে না। হয়তো কোনো এক যুবক রাতের বেলা তাঁরাদের নিয়ে ছবি এঁকেছে আর পরদিন আবার তার বন্ধুদের ডেকে দেখিয়েছে। সেই বন্ধুরাও হয়তো আবার নিজেদের মত করে অন্য তাঁরাদের নিয়ে ছবি এঁকেছে। এমনি ভাবেই হয়তো এক জন থেকে আরেক জনে, এক দল থেকে আরেক দলে, এক বংশ থেকে আরেক বংশে, এক যুগ থেকে অন্য আরেক যুগে তাঁরাদের ছবি প্রচলিত হয়ে আসছে। আর সেইসব ছবিই আজ আধুনিক জ্যোতিবিদ্যার বইয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। যারা এই ছবি এঁকেছিলো তারা কবেই বিলিন হয়ে গেছে সময়ের গর্ভে কিন্তু তাদের আকা সেই সব ছবি হাজার হাজার বছর ধরেও পরিবর্তন হয়নি। কেউ জানেনা কখন কে কোন ছবিটি কল্পনা করেছিলো, কিন্তু আজো তাদের সেই নিদৃষ্ট তাঁরাদের দিয়েই সেই একই ছবি কল্পনা করা হচ্ছে। এমনি ভাবেই হাজার হাজার বছর ধরে প্রতিটি তারার ছবি সেই একই রয়ে গেছে, কোনো পরিবর্তন হয়নি।

অতি আদিম কাল থেকেই মানুষ যে রাতের তাঁরা ভরা আকাশের মোহে আকৃষ্ট হয়েছে তার প্রমাণ মিলে গুহামানবের গুহায় তাঁরাভরা আকাশের ছবি দেখে। আগেই বলেছি প্রাচীন কালের মানুষেরা তাঁরাদের নিয়ে আলোচনা করেছে, তাঁরার সাথে তঁরা মিলিয়ে নানান ধরণের ছবি কল্পনা করেছে। প্রতিটি সভ্যতার মানুষেরাই তাঁরাদের নিয়ে এই আলোচনা জারী রেখেছে। তারা তাঁরাদের সেই কাল্পনিক ছবিকে কেন্দ্র করে তৈরি করেছে নানান ধরনের গল্প-কাহিনী, আবার কখনোবা তাদের মাঝে প্রচলিত কোনো গল্প-কাহিনীকে কেন্দ্র করেই আকাশের তাঁরাদের নিয়ে ছবি কল্পনা করেছে। সভ্যতাগুলি যখন আরো পরিপক্ক হয়েছে তখন তারা ধীরে ধীরে ঝুঁকেছে জ্যোতিষশাস্ত্রের দিকে, আর এই জ্যোতিষশাস্ত্র থেকেই জন্ম হয়েছে আমাদের আজকের আধুনিক জ্যোতিবিজ্ঞানের।

প্রচীন মানুষের কল্পনা করা তাঁরার ছবি আধুনিক জ্যোতিবিজ্ঞানও মেনে নিয়েছে। কিন্তু খুবই আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে – প্রাচীন সভ্য দেশগুলির কল্পনাকরা তাঁরার ছবি গুলির মধ্যেকার মিল গুলি। রাশিচক্রের বারোটি রাশির নাম ও গঠন প্রতিটি প্রাচীন দেশে প্রায় একই ছিলো এবং আধুনিক জ্যোতিবিজ্ঞানে সেগুলি আজো একই নামে পরিচিত।

আমাদের রাশিচক্র
পৃথিবী সূর্যের অন্যান্য গ্রহগুলির মতই সূর্যকে প্রদক্ষিন করছে। আমরা পৃথিবীর মানুষেরা পৃথিবীর এই ভ্রমণ বেগ বুঝতে পারিনা, বরং সূর্যকেই আকাশ পথে চলতে দেখি। সূর্যকে দিনের বেলে আকাশে একটি বৃত্তাকার পথে চলতে দেখা যায়। সূর্যের এই আপাত ভ্রমণ বৃত্তপথকে প্রাচীন প্রতিটি জাতী বারটি ভাগে ভাগ করেছে। কোনো দেশই বারোর কম বা বেশী ভাগে ভাগ করেনি। কোথায় গ্রীস আর কোথায় আমাদের ভারতবর্ষ, আর কোথাইবা মিসর। এই সমস্ত দূর দেশের মাঝে যখন যোগাযোগের কোনো সুযোগই ছিলো না তখন এই আশ্চর্য মিল সত্যিই অদ্ভূত মনে হয়, মনে হয় অলৌকিক কিছু রয়েছে এর পিছনে। যার ব্যাখ্যা আজো মেলেনি।

সূর্যপথের এই বারটি ভাগের বারটি নাম রয়েছে এবং এই বারটি অংশেই বারটি ছবি কল্পনা করা হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে শুধুমাত্র চীন ছাড়া, গ্রীস, মিসর, ক্যালডিয়া, আরব, ভারতবর্ষ প্রভৃতি দেশে এ বারটি অংশ এবং এদের নাম হুবুহু একই ছিলো এবং আছে, তাছাড়া তাদের ছবিও প্রায় একইরূপ। সূর্যপথের বারভাগের প্রতিটি ভাগকে রাশি বলে আর তাই সূর্যের ভ্রমণ পথকে রাশি চক্রও বলা হয়।

রাশিচক্রের বারটি রাশি

বাংলা নাম >>> আরবী নাম >>> পাশ্চাত্ত্য নাম >>> রাশির ছবি
১। মেষ >>>>> হামাল >>>>>এরিস >>>>>>> ভেড়া।
২। বৃষ >>>>> থৌর >>>>>> টরাস >>>>>>> বলদ।
৩। মিথুন >> > জৌরা >>>>> জেমিনী >>>>>> নর-নারী।
৪। কর্কট >>>> সরতন >>>> ক্যান্সার >>>>> কাঁকড়া।
৫। সিংহ >>>> আসাদ >>>>> লিও >>>>>> সিংহ।
৬। কন্যা >>>> আজরা >>>>>ভার্জো >>>>>> কুমারী মেয়ে।
৭। তুলা >>>> মীজান >>>>> লিব্রা >>>>>>> নিক্তি।
৮। বৃশ্চিক >>> আকরাব >>>> স্করপিও >>>>>> কাঁকড়া বিছা।
৯। ধনু >>>>> কৌস >>>>> স্যাজিটারিয়াস >>> ধনুক।
১০। মকর>>>> জিদ্দী >>>>> ক্যাপ্রিকর্নস >>>>> ছাগল।
১১। কুম্ভ >>>> দলওয়া >>>>একোয়ারিয়াস >>>> কলস।
১২। মীন >>>> হূত >>>>>> পিসেস >>>>>>>> মাছ।



রাশিচক্রের রাশিগুলোর মধ্য দিয়ে সূর্যের আপত গতি।
প্রাচীন কালের লোকদের কাছে রাশিচত্রের তাঁরামণ্ডলিগুলি ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেই সময় এই রাশি চক্রের উপর চাঁদ আর সূর্যের অবস্থান দেখেই মাস-ঋতু-বছর হিসাব করা হতো। প্রতি মাসেই সূর্য এক রাশি থেকে আরেক রাশিতে সরে যায়, ফলে সূর্য কোন রাশিতে তা দেখে সহজেই বুঝা যায় তখন কোন মাস চলছে।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সূর্য কোন রাশিতে অবস্থান করছে তা বুঝবো কি করে!! দিনের বেলাতো সূর্যের আলোতে কোনো তাঁরাই দেখা যাবে না, তাহলে উপায়? উপায় অবশ্যই আছে, মোটামুটি সকলেই আমরা জানি পূর্ণিমার রাতে চাঁদ থাকে টিক সূর্যের উল্টো দিকে। ফলে তখন চাঁদ যে রাশিতে থাকবে সূর্য থাকবে তার পরের ঠিক সপ্তম রাশিতে। ধরা যাক কোনো পূর্ণিমা রাতে আমরা দেখতে পেলাম চাঁদ রয়েছে মকর রাশিতে তাহলে সেই সময় সূর্য থাকবে কর্কট রাশিতে। কিন্তু এই পদ্ধতির একটি সমস্যা হচ্ছে, এর জন্য আপনাকে পুরো এক মাস অপেক্ষা করতে হবে। তবে আরো একটি সহজ উপায়ে আপনি প্রতি দিনই জেনে নিতে পারেন সূর্য কোন রাশিতে আছে।

মহাকাশের প্রতিটি তাঁরা, তাঁরামণ্ডলি, সূর্য ইত্যাদি জ্যোতিষ্কই ২৪ঘন্টায় এক বার মধ্যগমন করে। 
মধ্যগমন হচ্ছে-ঠিক মাঝ আকাশে অবস্থান করা। যা বলছিলাম- আমাদের সূর্য মধ্যগমন করে ঠিক দুপুরে। সুতরাং সূর্যের ঠিক উল্টো দিকের রাশিটি মধ্যগমন করবে ঠিক মাঝ রাত্রিতে। ফলে ঠিক মাঝরাত্রিতে রাশিচক্রের যে রাশিটি মধ্যগমন করবে তার আগের ঠিক সপ্তম রাশিতেই সূর্য সেই দিনের বেলাতে অবস্থা করেছিলো। তাই চাইলেই একজন লোক প্রতিদিন রাতেই দেখে নিতে পারি সূর্যের অবস্থান কোন রাশিতে। এভাবেই মূলতো প্রাচীন কালের লোকেরা হিসাব রাখতো।

বুধ গ্রহ

বুধ (Mercury) সৌরজগতের প্রথম এবং ক্ষুদ্রতম গ্রহ। এটি সূর্যের সর্বাপেক্ষা নিকটতম গ্রহ। এর কোনও উপগ্রহ নাই। এটি সূর্যকে প্রতি ৮৮ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু একে পৃথিবী থেকে শহজে দেখা যায় না, কারণ সুর্যের সাথে এর বৃহত্তম কৌণিক পার্থক্য হচ্ছে মাত্র ২৮.৩ ডিগ্রী। কেবল সকাল ও সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোয় একে দেখা যায়। গ্রহটি সম্বন্ধে তুলনামূলক অনেক কম তথ্য জানা গেছে। বুধের দিকে অগ্রসর হয়েছে এমন একমাত্র নভোযান হচ্ছে মেরিনার ১০ যা ১৯৭৪ - ১৯৭৫ সালে অভিযান চালায়।

নামকরণ ও সংস্কৃতি

রোমানরা এই গ্রহের নামকরণ করেছিল তাদের ক্ষীপ্রগতি বিশিষ্ট বার্তাবাহক দেবতা মার্কিউরির নামানুসারে। পৌরাণিক কাহিনীতে মার্কারি (বুধ) হল জুপিটার (বৃহস্পতি) ও মেইয়ার পুত্র। গোধূলি লগ্নে আকাশে বুধকে অতি দ্রুত গতিতে চলতে দেখা যায়। সম্ভবত এই কারণেই এর এই ধরণের নামকরণ করা হয়েছে। এই পৃষ্ঠায় সংযুক্ত তথ্যছকটির উপরে বুধ গ্রহের যে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক প্রতীকের চিত্র দেয়া হয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে দেবতার মাথা এবং তার টুপির প্রতীকী অর্থ বহন করে। এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন একটি জ্যোতিষ শাস্ত্রীয় চিহ্ন। গ্রিকরা বুধ গ্রহকে Στίλβων তথা "স্টিবলন" নামে ডাকত যার অর্থ দ্যুতি প্রদানকারী। গ্রীসে এর অন্য একটি নাম ছিল "হেরমাওন" বা "হার্মিজ"। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর পূর্বে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বুধকে দুইটি পৃথক বস্তুর সমন্বয় মনে করত যার একটি কেবল সূর্যোদয়ের সময় এবং অপরটি কেবল সূর্যাস্তের সময় দেখা যায়। মার্কারি নামীয় এই গ্রহটির বাংলা নাম বুধ এসেছে ভারতে ব্যবহৃত এর সংস্কৃত নাম থেকে। ভারতে এর নাম ছিল বুধ (बुध)। বুধ হল চন্দ্রের পুত্রের নাম। চৈনিক, কোরীয়, জাপানি এবং ভিয়েতনামি সংস্কৃতিতে একে "জল তারা" (水星) বলা হয় যা বিশ্ব গঠনকারী পাঁচটি মৌলিক পদার্থের দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত। হিব্রুতে এর নাম হল কোখাভ্‌ খামা (כוכב חמה), তথা উত্তপ্ত বস্তুর তারা। এখানে উত্তপ্ত বস্তু বলতে সূর্যকে বোঝানো হয়েছে।

অভ্যন্তরীন গঠন

বুধ চারটি পার্থিব গ্রহের একটি অর্থাৎ এরও পৃথিবীর মত কঠিন পৃষ্ঠভূমি রয়েছে। চারটি পার্থিব গ্রহের মধ্যে এর আকার সবচেয়ে ছোট; বিষুবীয় অঞ্চলে এর ব্যাস ৪৮৭৯ কিমি। বুধের গাঠনিক উপাদানসমূহের মধ্যে ৭০% ধাতব এবং বাকি ৩০% সিলিকেট জাতীয়। এর ঘনত্ব সৌর জাগতিক বস্তসমূহের ঘনত্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ৫.৪৩ গ্রাম/সেমি³; পৃথিবী থেকে সামান্য কম। মহাকর্ষীয় সংকোচনের প্রভাব সম্পূর্ণ উদ্ধার করতে পারলে বুধের গাঠনিক উপাদানসমূহের ঘনত্ব আরও বেশী হত।
 
বুধের বৃহৎ কেন্দ্র

বুধের অভ্যন্তরীন গঠন বোঝার ক্ষেত্রে এর ঘনত্ব ভাল ভূমিকা রাখতে পারে। পৃথিবীর উচ্চ ঘনত্বের মূল কারণ হচ্ছে মহাকর্ষীয় সংকোচন যার পরিমাণ কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশী। বুধ অনেক ছোট এবং এর কেন্দ্র পৃথিবীর মত অতটা দৃঢ় ও সংকুচিত নয়। তাহলে বুধের এত উচ্চ ঘনত্বের মূল কারণ হতে পারে, এর কেন্দ্র অনেক বড় এবং লৌহসমৃদ্ধ। আধুনিককালে ভূতত্ত্ববিদরা আবিষ্কার করেছেন যে বুধের সমগ্র আয়তনের ৪২% ই হচ্ছে এর কেন্দ্র। যেখানে পৃথিবীর কেন্দ্র মাত্র ১৭%।

কেন্দ্রের চারপাশে ৬০০ কিমি অঞ্চল জুড়ে রয়েছে ম্যানটেল। বুধের ইতিহাস ঘেটে যে তথ্য পাওয়া গেছে সে অনুসারে এখন সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, অনেক আগে বুধের সাথে কয়েক কিলোমিটার ব্যাস বিশিষ্ট একটি বস্তুর সংঘর্ষ ঘটেছিল। এই সংঘর্ষে বুধের ম্যানটেলের বেশ কিছু অংশ খসে পড়ে। এ কারণেই বর্তমানে কেন্দ্রের তুলনায় ম্যানটেলের পুরুত্ব এত কম। অবশ্য এ বিষয়ে অন্যান্য মতও রয়েছে। ধারণামতে বুধের ভূ-ত্বকের পুরুত্ব ১০০ - ২০০ কিমি-এর মধ্যে। এর পৃষ্ঠতরের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে প্রচুর সরু ridge রয়েছে যার কয়েকটি প্রায় কয়েকশো কিলোমিটার পর্যন্ত প্রলম্বিত। বিশ্বাস করা হয় এগুলো বুধের কেন্দ্র এবং ম্যানটেল হিসেবে গঠিত হয়েছিলো, কিন্তু এগুলো শীতল ও সংকুচিত হওয়ার আগেই বুধের ভূ-ত্বক কঠিন হয়ে যায়। এ কারণে এগুলো ridge হিসেবে রয়ে যায়।[৪]

আমাদের সৌর জগতের অন্যান্য বৃহৎ গ্রহগুলোর যে কোনটির তুলনায় বুধে লৌহের পরিমাণ বেশী। বুধে ধাতুর এই উচ্চ পরিমাণের কারণ ব্যাখ্যার জন্য বেশ কয়েকটি তত্ত্ব প্রস্তাব করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশী গৃহীত তত্ত্বটি হচ্ছে: বুধে ধাতু-সিলিকেটের অনুপাত সাধারণ কনড্রাইট উল্কায় এই অনুপাতের সমান ছিল এবং একসময় এর ভর বর্তমান ভরের ২.২৫ গুণ ছিল। সৌর জগতের ইতিহাস থেকে জানা যায় এক পর্যায়ে একটি বৃহৎ planetesimal বুধে আঘাত হানে যার ভর এর ছয় ভাগের এক ভাগ ছিল। এই সংঘর্ষের ফলে এর মূল ভূ-ত্বক ও ম্যানটেলের অনেকাংশ ক্ষয়ে যায়, কিন্তু অভ্যন্তরীন কেন্দ্রটি আগের মতই রয়ে যায়। ফরে কেন্দ্র এতো বড় এবং লৌহসমৃদ্ধ।[৩] পৃথিবীর একমাত্র কৃত্রিম উপগ্রহ চন্দ্রের উৎপত্তি ব্যাখ্যার জন্যও অনুরুপ একটি তত্ত্ব প্রস্তাবিত হয়েছে। একে giant impact theory বলা হয়। অন্য একটি মতে বলা হয়, বুধ গ্রহ সূর্যের শক্তি উৎপাদনের পরিমাণ সুস্থিত হওয়ার পূর্বে সৌর নীহারিকা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। সৃষ্টি আদিতে এর ভর সম্ভবত বর্তমান ভরের দ্বিগুণ ছিল। কিন্তু ভ্রূণ সূর্য সংকুচিত হওয়ার কারণে বুধের নিকটে তাপমাত্রা ২৫০০ থেকে ৩৫০০ কেলভিনে পৌঁছায়। অনেকের মতে এই তাপমাত্রা ১০,০০০ কেলভিনেরও উপর হতে পারে। এই উচ্চ তাপমাত্রায় বুধ পৃষ্ঠের অনেক শিলা জাতীয় বস্তুই হয়তো বাষ্পীভূত হয়ে গিয়েছিল এবং একটি শিলা বাষ্প বিশিষ্ট বায়ুমণ্ডল সৃষ্টি করেছিল। সৌর বায়ু এই শিলা বাষ্প সরিয়ে নিয়ে যায়। তৃতীয় অন্য একটি তত্ত্বে প্রস্তাব করা হয়েছে, যে কণাগুলো থেকে বুধ গ্রহের বিবৃদ্ধি ঘটছিলো সেগুলোর উপর সৌর নীহারিকা এক ধরণের গতিরোধক (drag) আরোপ করেছিল। এতে হালকা বস্তুগুলো আর বিবৃদ্ধি সাধনে অংশ নিতে পারেনি। এই তত্ত্বগুলোর প্রত্যেকটি বুধ পৃষ্ঠের গঠন সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন মত দেয়। এই তত্ত্বগুলো পরীক্ষা করে দেখার জন্য বুধ অভিযানে একটি মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে: মেসেঞ্জার। এছাড়া ভবিষ্যতে আরেকটি যান পাঠানো হচ্ছে যার নাম বেপিকলম্বো।

Wednesday, July 13, 2011

রাতের আকাশ ও তারা পরিচিতি

সেই সে অতি প্রাচীন কাল থেকেই আকাশের তারাদের দিয়ে নানা প্রকারের ছবির কল্পনা করেছে মানুষ। আদি কালের যাযাবর জাতীর যাযাবর লোক খোলা আকাশের নিচে তাদের পালিত গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি রাতের পর রাত পাহারা দিতে দিতে আকাশে ফুটে থাকা অসংখ্যা অগুনিত তাঁরাদের দেখে দেখে এঁকেছে তাদের কল্পনার ছবি তাঁরাদেরই নিয়ে। নিজেদের আকা তাঁরাদের সেই সব ছবি নিয়ে দিনের বেলা হয়তো তারা কত গল্প করতো।
2010-11-26_172257
রাতের আকাশের তাঁরার মেলাতেই দেখা দিয়েছে তাদের মেষ, বৃষ। যাযাবর যুবকের চোখে তার প্রিয়াও তাঁরাদের মাঝেই স্থান করে নিয়েছে, শস্য চয়নরতা কন্যারাশি তারই স্বাক্ষী।আরো আছে মিথুন রাশি। কিন্তু কিভাবে শুরু হয়েছিলো ছবি আকার এই খেলা তা কেউ বলতে পারে না। হয়তো কোনো এক যুবক রাতের বেলা তাঁরাদের নিয়ে ছবি এঁকেছে আর পরদিন আবার তার বন্ধুদের ডেকে দেখিয়েছে। সেই বন্ধুরাও হয়তো আবার নিজেদের মত করে অন্য তাঁরাদের নিয়ে ছবি এঁকেছে। এমনি ভাবেই হয়তো এক জন থেকে আরেক জনে, এক দল থেকে আরেক দলে, এক বংশ থেকে আরেক বংশে, এক যুগ থেকে অন্য আরেক যুগে তাঁরাদের ছবি প্রচলিত হয়ে আসছে। আর সেইসব ছবিই আজ আধুনিক জ্যোতিবিদ্যার বইয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। যারা এই ছবি এঁকেছিলো তারা কবেই বিলিন হয়ে গেছে সময়ের গর্ভে কিন্তু তাদের আকা সেই সব ছবি হাজার হাজার বছর ধরেও পরিবর্তন হয়নি। কেউ জানেনা কখন কে কোন ছবিটি কল্পনা করেছিলো, কিন্তু আজো তাদের সেই নিদৃষ্ট তাঁরাদের দিয়েই সেই একই ছবি কল্পনা করা হচ্ছে। এমনি ভাবেই হাজার হাজার বছর ধরে প্রতিটি তারার ছবি সেই একই রয়ে গেছে, কোনো পরিবর্তন হয়নি।
অতি আদিম কাল থেকেই মানুষ যে রাতের তাঁরা ভরা আকাশের মোহে আকৃষ্ট হয়েছে তার প্রমাণ মিলে গুহামানবের গুহায় তাঁরাভরা আকাশের ছবি দেখে। আগেই বলেছি প্রাচীন কালের মানুষেরা তাঁরাদের নিয়ে আলোচনা করেছে, তাঁরার সাথে তঁরা মিলিয়ে নানান ধরণের ছবি কল্পনা করেছে। প্রতিটি সভ্যতার মানুষেরাই তাঁরাদের নিয়ে এই আলোচনা জারী রেখেছে। তারা তাঁরাদের সেই কাল্পনিক ছবিকে কেন্দ্র করে তৈরি করেছে নানান ধরনের গল্প-কাহিনী, আবার কখনোবা তাদের মাঝে প্রচলিত কোনো গল্প-কাহিনীকে কেন্দ্র করেই আকাশের তাঁরাদের নিয়ে ছবি কল্পনা করেছে। সভ্যতাগুলি যখন আরো পরিপক্ক হয়েছে তখন তারা ধীরে ধীরে ঝুঁকেছে জ্যোতিষশাস্ত্রের দিকে, আর এই জ্যোতিষশাস্ত্র থেকেই জন্ম হয়েছে আমাদের আজকের আধুনিক জ্যোতিবিজ্ঞানের।
প্রচীন মানুষের কল্পনা করা তাঁরার ছবি আধুনিক জ্যোতিবিজ্ঞানও মেনে নিয়েছে। কিন্তু খুবই আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে – প্রাচীন সভ্য দেশগুলির কল্পনাকরা তাঁরার ছবি গুলির মধ্যেকার মিল গুলি। রাশিচক্রের বারোটি রাশির নাম ও গঠন প্রতিটি প্রাচীন দেশে প্রায় একই ছিলো এবং আধুনিক জ্যোতিবিজ্ঞানে সেগুলি আজো একই নামে পরিচিত।
আমাদের রাশিচক্র
পৃথিবী সূর্যের অন্যান্য গ্রহগুলির মতই সূর্যকে প্রদক্ষিন করছে। আমরা পৃথিবীর মানুষেরা পৃথিবীর এই ভ্রমণ বেগ বুঝতে পারিনা, বরং সূর্যকেই আকাশ পথে চলতে দেখি। সূর্যকে দিনের বেলে আকাশে একটি বৃত্তাকার পথে চলতে দেখা যায়। সূর্যের এই আপাত ভ্রমণ বৃত্তপথকে প্রাচীন প্রতিটি জাতী বারটি ভাগে ভাগ করেছে। কোনো দেশই বারোর কম বা বেশী ভাগে ভাগ করেনি। কোথায় গ্রীস আর কোথায় আমাদের ভারতবর্ষ, আর কোথাইবা মিসর। এই সমস্ত দূর দেশের মাঝে যখন যোগাযোগের কোনো সুযোগই ছিলো না তখন এই আশ্চর্য মিল সত্যিই অদ্ভূত মনে হয়, মনে হয় অলৌকিক কিছু রয়েছে এর পিছনে। যার ব্যাখ্যা আজো মেলেনি।
সূর্যপথের এই বারটি ভাগের বারটি নাম রয়েছে এবং এই বারটি অংশেই বারটি ছবি কল্পনা করা হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে শুধুমাত্র চীন ছাড়া, গ্রীস, মিসর, ক্যালডিয়া, আরব, ভারতবর্ষ প্রভৃতি দেশে এ বারটি অংশ এবং এদের নাম হুবুহু একই ছিলো এবং আছে, তাছাড়া তাদের ছবিও প্রায় একইরূপ। সূর্যপথের বারভাগের প্রতিটি ভাগকে রাশি বলে আর তাই সূর্যের ভ্রমণ পথকে রাশি চক্রও বলা হয়।
রাশিচক্রের বারটি রাশি
বাংলা নাম >>> আরবী নাম >>> পাশ্চাত্ত্য নাম >>> রাশির ছবি
১। মেষ >>>>> হামাল >>>>>এরিস >>>>>>> ভেড়া।
২। বৃষ >>>>> থৌর >>>>>> টরাস >>>>>>> বলদ।
৩। মিথুন >> > জৌরা >>>>> জেমিনী >>>>>> নর-নারী।
৪। কর্কট >>>> সরতন >>>> ক্যান্সার >>>>> কাঁকড়া।
৫। সিংহ >>>> আসাদ >>>>> লিও >>>>>> সিংহ।
৬। কন্যা >>>> আজরা >>>>>ভার্জো >>>>>> কুমারী মেয়ে।
৭। তুলা >>>> মীজান >>>>> লিব্রা >>>>>>> নিক্তি।
৮। বৃশ্চিক >>> আকরাব >>>> স্করপিও >>>>>> কাঁকড়া বিছা।
৯। ধনু >>>>> কৌস >>>>> স্যাজিটারিয়াস >>> ধনুক।
১০। মকর>>>> জিদ্দী >>>>> ক্যাপ্রিকর্নস >>>>> ছাগল।
১১। কুম্ভ >>>> দলওয়া >>>>একোয়ারিয়াস >>>> কলস।
১২। মীন >>>> হূত >>>>>> পিসেস >>>>>>>> মাছ।
রাশিচক্রের রাশিগুলোর মধ্য দিয়ে সূর্যের আপত গতি।
প্রাচীন কালের লোকদের কাছে রাশিচত্রের তাঁরামণ্ডলিগুলি ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেই সময় এই রাশি চক্রের উপর চাঁদ আর সূর্যের অবস্থান দেখেই মাস-ঋতু-বছর হিসাব করা হতো। প্রতি মাসেই সূর্য এক রাশি থেকে আরেক রাশিতে সরে যায়, ফলে সূর্য কোন রাশিতে তা দেখে সহজেই বুঝা যায় তখন কোন মাস চলছে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সূর্য কোন রাশিতে অবস্থান করছে তা বুঝবো কি করে!! দিনের বেলাতো সূর্যের আলোতে কোনো তাঁরাই দেখা যাবে না, তাহলে উপায়? উপায় অবশ্যই আছে, মোটামুটি সকলেই আমরা জানি পূর্ণিমার রাতে চাঁদ থাকে টিক সূর্যের উল্টো দিকে। ফলে তখন চাঁদ যে রাশিতে থাকবে সূর্য থাকবে তার পরের ঠিক সপ্তম রাশিতে। ধরা যাক কোনো পূর্ণিমা রাতে আমরা দেখতে পেলাম চাঁদ রয়েছে মকর রাশিতে তাহলে সেই সময় সূর্য থাকবে কর্কট রাশিতে। কিন্তু এই পদ্ধতির একটি সমস্যা হচ্ছে, এর জন্য আপনাকে পুরো এক মাস অপেক্ষা র্য কোন রাশিতে আছে।
মহাকাশের প্রতিটি তাঁরা, তাঁরামণ্ডলি, সূর্য ইত্যাদি জ্যোতিষ্কই ২৪ঘন্টায় এক বার মধ্যগমন করে। মধ্যগমন হচ্ছে-ঠিক মাঝ আকাশে অবস্থান করা। যা বলছিলাম- আমাদের সূর্য মধ্যগমন করে ঠিক দুপুরে। সুতরাং সূর্যের ঠিক উল্টো দিকের রাশিটি মধ্যগমন করবে ঠিক মাঝ রাত্রিতে। ফলে ঠিক মাঝরাত্রিতে রাশিচক্রের যে রাশিটি মধ্যগমন করবে তার আগের ঠিক সপ্তম রাশিতেই সূর্য সেই দিনের বেলাতে অবস্থা করেছিলো। তাই চাইলেই একজন লোক প্রতিদিন রাতেই দেখে নিতে পারি সূর্যের অবস্থান কোন রাশিতে। এভাবেই মূলতো প্রাচীন কালের লোকেরা হিসাব রাখতো।

শুক্র গ্রহের আদি-অন্ত

শুক্র গ্রহ বা ভেনাস (Venus) সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ। কারণ সূর্য থেকে দূরত্বের দিক থেকে হিসেব করলে সূর্যের একেবারে কাছের গ্রহ হচ্ছে বুধ গ্রহ, আর এর পরই শুক্র গ্রহের অবস্থান। বুধ আর পৃথিবীর মতই এই গ্রহটিও কঠিন পদার্থ দিয়ে তৈরি বলে একে পার্থিব গ্রহ বলা হয়। পৃথিবী এবং শুক্রের মধ্যে গাঠনিক উপাদান, আকার-আকৃতি, মুক্তি বেগ এবং অন্যান্য মহাযাগতিক আচরণে মিল রয়েছে বলে শুক্রকে পৃথিবীর বোন গ্রহ বা “sister planet” বলে।
2011-01-08_111429এটি এমন একটি গ্রহ যাকে দুটি ভিন্ন ভিন্ন তাঁরা নামে ডাকা হয়। ভোড় রাতের আকাশে শুকতাঁরা আর সন্ধ্যার আকাশের সন্ধ্যাতাঁরা একই খ-বস্তু, যা সত্যিকার অর্থে একটি গ্রহ, আর এই গ্রহটিই হচ্ছে শুক্রগ্রহ। অনেক যায়গায় এই গ্রহটি যখন ভোরের আকাশে উদিত হয় তখন লুসিফার বা শয়তান নামেও ডাকা হয়ে থাকে।
শুক্র গ্রহের লাতিন নামকরণ করা হয়েছে রোমান প্রেমের দেবী ভিনাসের নামানুসারে। পৌরাণিক কাহিনীতে ভেনাস (শুক্র) ভালকানের স্ত্রী।
2011-01-08_111531সৌন্দর্যে দেবী ভেনার্স মূর্তী
কক্ষপথ
আমরা জানি সব গ্রহের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার, কিন্তু শুক্রের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার না হয়ে প্রায় গোলাকার। তাই এর উৎকেন্দ্রিকতা শতকরা এক ভাগেরও কম। আগেই বলেছি শুক্র হচ্ছে দূরত্বের দিক থেকে সূর্যের দ্বিতীয় গ্রহ, তাই বুধ গ্রহেরই মতো এই গ্রহটিকেও শুধুমাত্র সূর্যোদয়ের কয়েক ঘণ্টা আগে এবং সূর্যাস্তের কয়েক ঘণ্টা পরে দেখা যায়। আরো পরিস্কার ভাবে বললে- সূর্য থেকে শুক্রের দূরত্ব কখনোই ৪৭ ডিগ্রীর বেশী হয় না, ফলে সূর্যদয়ের পূর্বে বা সূর্যাস্তের পরে তিন ঘন্টার সামান্য বেশী সময় ধরে একে পৃথিবী থেকে দেখতে পাওয়া যায়। অবশ্য যখন শুক্র তার উজ্জ্বলতম অবস্থায় থাকে তখন দিনের বেলায়ও একে দেখা যায়। চাঁদ ছাড়া শুক্র গ্রহই একমাত্র জ্যোতিষ্ক যা পৃথিবীর আকাশ থেকে রাত এবং দিন উভয় সময়েই দেখা যায়। আর সূর্য ও চাঁদের পরে শুক্রই হচ্ছে তৃতীয় উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক পৃথিবীর আকাশে। আরো জোনে রাখুন পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটতম গ্রহ হচ্ছে এই শুক্র গ্রহ।
শুক্র গ্রহের অন্তঃসংযোগের সময় এটি পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটে আসে; তখন শুক্র থেকে পৃথিবীর দূরত্ব হয় চাঁদ থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্বের প্রায় ১০০ গুণ। ১৮৫০ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে শুক্র গ্রহ যখন পৃথিবীর কাছে পৌঁছেছিল তখন এর দূরত্ব ছিল ৩৯,৫৪১,৮২৭ কিলোমিটার। ২১০১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত এটিই থাকবে সর্বনিম্ন দূরত্ব। কারণ এই দিনটিতে আবারো শুক্র গ্রহ ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর ৩৯,৫৪১,৫৭৮ কিলোমিটারের মধ্যে এসে পরবে।
ঘূর্ণন
শুক্র গ্রহের আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে – সূর্যের প্রায় সব কটি গ্রহই সূর্যকে কেন্দ্র করে পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘুরছে কিন্তু এই গ্রহটি ঘুরছে পূর্ব থেকে পশ্চিমে। আমাদের পৃথিবীতে সূর্য পূর্ব থেকে উদিত হয়ে পশ্চিমে অস্ত যেতে দেখি, কিন্তু শুক্র গ্রহে সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হয়ে পূর্বে অস্ত যাচ্ছে। যদি কোনো দিন মানুষ সেখানে দাঁড়াতে পারে তাহলে এই বিচিত্র জিনিস দেখে নয়ন জুড়াবার সুযোগ পাবে।
শুক্রের আহ্নিক গতি হচ্ছে পৃথিবীর হিসাবে ১১৬.৭৫ দিনের সমান। আর তার নিজের কক্ষপথে সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে পৃথিবীর হিসাবে ২২৪.৭০ দিন। এবার বলুন- শুক্রীয় কত দিনে শুক্রীয় এক বছর হয়? উত্তর হচ্ছে – শুক্রের মাত্র ১.৯২ দিনেই শুক্রের এক বছর হয়ে যায়, অদ্ভুত তাই না!
চাঁদের যেমন কলা দেখা যায় তেমনি টেলিস্কোপ দিয়ে শুক্রেরও কলা দেখা যায়।
2011-01-08_111550কলার প্রক্রিয়া
2011-01-08_111610২০০২ সালের একটি শুক্র কলার চিত্র।
2011-01-08_111641পৃথিবী থেকে বড় কোনো টেলিস্কোপে দেখলে শুক্রের রং এমন দেখাবে।
আবহাওয়া
শুক্রপৃষ্ঠ দেশের উপরে ৬৫ কি.মি. পুরু একটি মেঘের স্তর রয়েছে। এই স্তরের উপরে ৭৬ কি.মি উঁচুতে আরো একটি স্বচ্ছ স্তর রয়েছে। মেঘের স্তরটি প্রতি ৪ দিনে একবার গ্রহের কক্ষের চার দিকে আবর্তিত হয়। পৃথিবীর আকাশে যেমন বিদ্যুত চমকাতে দেখা যায় তেমনি শুক্রের আকাশেও বিদ্যুৎ চমকাতে দেখা যায়।
শুক্র গ্রহের আবহমন্ডলের প্রায় সবটাই (৯৭ ভাগ) কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস। আর প্রায় আড়াই ভাগ রয়েছে নাইট্রোজেন, অন্যদাকে মাত্র ০.৪ ভাগ অক্সিজেন গ্যাস রয়েছে শুক্রের বায়ু মন্ডলে। শুক্র গ্রহে কিছু হাইড্রোজেন, এ্যামোনিয়া এবং নামমাত্র জলীয়বাষ্পের অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে উইকিতে দেখা যাচ্ছে এইসমস্ত উপাদানের পরিমাণ দেয়া আছে এমন-
৯৬.৫% কার্বন ডাই অক্সাইড
৩.৫% নাইট্রোজেন
.০১৫% সালফার ডাই অক্সাইড
.০০৭% আর্গন
.০০২% বাষ্প
.০০১৭% কার্বন মনোক্সাইড
.০০১২% হিলিয়াম
.০০০৭% নিয়ন
trace কার্বনিল সালফাইড
trace হাইড্রোজেন ক্লোরাইড
trace হাইড্রোজেন ফ্লোরাইড
ঘন কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর স্তর ভেদ করে সূর্যের তাপ শুক্র পৃষ্ঠে পতিতো হয় ঠিক ই কিন্তু সেখান থেকে আর ফিরে আসতে পারে না। ফলে শুক্রের তাপ মাত্রা হয়ে যায় আনেক, ৭৫০ ডিগ্রী কে. পর্যন্ত। আবহাওমণ্ডলের উপাদান আর তাপের কথা বিবেচনা করে শুক্র গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভবনা অনায়াশেই নাকচ করে দেয়া যায়।
পৃষ্ঠদেশ
ঘন ও পুরো মেঘের স্তরের কারনে পৃথিবী বা মহাশূন্য থেকে টেলিস্কোপের সাহায্যে কিছুতেই শুক্রের পৃষ্ঠদেশ দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু রাশিয়া ও আমেরিকার ভেনেরা ও পাইওনিয়ার ভেনাস অরবিটার, সেই সাথে অন্যান্য ভেনাস মিশনের ফলাফল থেকে এটা জানা গেছে যে শুক্র গ্রহের পৃষ্ঠ দেশের শতকরা ৭০ ভাগই মোটামুটি সমতল। এই সমতল অংশের ২০ শতাংশ আবার নিম্নভূমি। শুক্রের সবচেয়ে উঁচু স্থানটির নাম দেয়া হয়েছে Maxweell montes, সমতল ভূমি থেকে এর উচ্চতা ১১ কি.মি.।এই Maxweell montesটি ইশতার টেরা নামক অঞ্চলে অবস্থিত।
2011-01-08_111659Maxweell montes
শুক্র অভিযান
আগেই বলেছি ঘন মেঘের কারণে শুকের সারফেজ দেখা অসম্ভব, তাই শুক্র গ্রহের তথ্য সংগ্রহের জন্য অনেকগুলি মহাকাশযান শুক্র অভিযানে পাঠানো হয়েছে। সেগুলির মধ্যে পাইওনিয়ার, ভেনাস- ১ ও ২ এবং ভেনেরা ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাইওয়নিয়ার মহাকাশযান শুক্র গ্রহের কাছ থেকে অনেক সব ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। সেগুলি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শুক্র গ্রহে বিশাল পাহাড়, সমতলভূমি ও অনেক আগ্নেয়গিরি রয়েছে। পাইওনিয়ারের পাঠানো তথ্য উপাত্ত ও ছবির সাহায্যেই শুক্রের মোটামুটি একটি মানচিত্র দাঁড় করানো গেছে।
2011-01-08_111720 The Pioneer Venus orbiter
তাছাড়া ভেনেরা-১৪ ও ১৫ শুক্র গ্রহে নেমে শুক্রপৃষ্ঠের অনেক ছবি তলে সেগুলি পৃথিবীতে পাঠিয়েছে ।
আরো কিছু টুকি টাকি তথ্য
# শুক্রের ব্যাস ১২,১০৪ কিলোমিটার।
# শুক্র গ্রহের উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো চৌম্বকক্ষেত্র নেই।
# শুক্রের পৃষ্ঠদেশ প্রচণ্ড রকমের শুষ্ক।
# শুক্র গ্রহের মুক্তি বেগ বা এসকেপ ভেলোসিটি প্রতি সেকেন্ডে ৬.৫ মাইল।
# শুক্র গ্রহের কোনো উপগ্রহ বা চাঁদ নেই।
# শুক্র গ্রহে প্রাণের কোনো অস্তিত্ব নেই।
# শ্রক্রের উজ্জ্বলতা সবচেয়ে কম যখন থাকে তার মান হয় -৩.৮ আর স্বচেয়ে বেশি উজ্জ্বলতার মান হচ্ছে -৪.৬।
# সূর্য থেকে শুক্রের দূরত্ব 108,208,930 কি.মি.
# শুক্রের Mass: 4,868,500,000,000,000,000,000,000 কেজি।
# শুক্র গ্রহ একটি অস্বচ্ছ সালফিউরিক এ্যাসিডের মেঘ দ্বারা আবৃত। এই মেঘ প্রচণ্ড reflective ও ঘন হওয়ায় সাধারণ আলোয় শুক্রের পৃষ্টদেশ দেখা সম্ভব হয় না।
# পৃথিবী, মঙ্গল ও শুক্রকে অনেক স্থানেই তিন বোন বিবেচনা করা হয় তাদের অনেক মিলের জন্য।
# আকৃতির তুলনা
2011-01-08_111736
বাম দিক থেকে- বুধ, শ্রক্র, পৃথিবী, মঙ্গল।

গ্রন্থপুঞ্জিঃ
খগোল পরিচয় – মোহাম্মদ আবদুল জব্বার।
বিশ্ব ও সৌরজগৎ – মোহাম্মদ আবদুল জব্বার।
মহাকাশ বার্তা পত্রিকার কয়েকটি ইসু।

ছবি ও নেট লিংক সমূহঃ
উইকি
planet-facts
(সকল প্রকারের অনিচ্ছাকৃত ভুল ও অপারদর্শিতা হেতু অস্বচ্ছতার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। বিভিন্ন যায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলির মাঝে সমন্যয় করার একটি প্রয়াস এই লেখাটি, তাই তথ্যের কোনো গরমিল বা ভুল আপনার চোখে পরলে সেটি আমারই দায় বা ভুল হিসেবে ধরে নিবেন। গুণীজন নিজ গুণেই আমার ভুলগুলি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এ আশাই রইলো। ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন সকলে।)

কৃষ্ণ গ্রহ, শিশু মহা বিশ্ব এবং অন্যান্য রচনা – স্টিপেন হকিং

যারা মহা বিশ্ব নিয়ে আগ্রহী তাদের জন্য আরেকটি বই। স্টিপেন হকিং এর Black Holes and Baby Universes and Other Essays বাংলা অনুবাদ। বইটি পড়ে পদার্থ বিজ্ঞান সম্পর্কে আরো কিছু ভালো ধারনা নিতে পারবেন। এখানে স্টিপেন হকিং এর শৈশব সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া আছে, তাই বুঝতে পারবেন বিজ্ঞানীদের ইচ্ছে কেমন থাকে, তাদের পরিবেশ কেমন থাকে ইত্যাদি।
Black Holes and Baby Universes and Other Essays  শিশু মহা বিশ্ব, কৃষ্ণ গ্রহ ও অন্যান্য রচনা by স্টিপেন হকিং  | Techtunes
বই টি সম্পর্কে একটু বলি, স্টিপেন হকিং এর বাল্য কাল সম্পর্কে কিছু কাহিনী দেওয়া আছে। ( দেখুন নিজের সাথে মিলে যায় কিনা, তাহলে অন্তত বলতে পারবেন আমার সাথে স্টিপেন হকিং এর মিল আছে জানছ তোরা?? সুতরাং আমার সাথে ফাইজলামি অফ icon razz শিশু মহা বিশ্ব, কৃষ্ণ গ্রহ ও অন্যান্য রচনা by স্টিপেন হকিং  | Techtunes ) । তার সেই বিখ্যাত ও দূরারগ্য রোগ Amyotrophic lateral sclerosis (ALS) ও তার অভিজ্ঞতা। তার বিখ্যাত বই A Brief History of Time এর সম্পর্কে কিছু সংখিপ্ত আলোচনা। মহাবিশ্ব উৎপত্তি সম্পর্কে ভিবিন্ন তত্ব। কৃষ্ণ গহবর ও মহা বিশ্বের উৎপত্তি। মহাবিশ্বের বর্তমান ও ভবিশ্যত । কৃষ্ণগ্রহের কনাবাদী বলবিদ্যা ও অন্যান্য থীওরি বা ধারনা ইত্যাদি।
ডাউনলোড লিঙ্কঃ http://www.mediafire.com/?31djjjw5nkga1j0

সুপার টেলিস্কোপের তুলনায় কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা খুবই কম

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন যে তাদেরকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছে শুধুমাত্র কম্পিউটারেরর কম ধারনক্ষমতা ও কম প্রসেসিং ক্ষমতার কারনে। প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলার ব্যায়ে ৩০০০ এর বেশি এন্টেনা সহকারে Square Kilometre Array (SKA) অত্যন্ত সংবেদনশীল টেলিস্কোপ স্থাপন করেছে যার মাধ্যমে মহাবিশ্বের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা হবে। মহা শূণ্য গবেষণা কাজে অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে এই তিন হাজার এন্টেনা কাজ করবে নিয়মিতভাবে। এরা  একসাথে নয় মিলিয়ন সিগন্যাল প্রেরণ করতে পারে এবং  প্রতি মিনিটে ১৬০ গিগাবাইট এমপি৩ হিসেবে তথ্য জমা রাখবে। এই হিসেবে প্রতি দিন অনেক গুরুত্ব পূর্ণ তথ্যকেই রিসার্চ করার প্রয়োজন হয় যা কম্পিউটারগুলোর ধারণক্ষমতা ও কার্যক্ষমতার বাইরে।
dish
সিডনী বিশ্ববিদ্যালয়ের Bryan Gaensler জানান, সারা বছরের আগত তথ্যসমুহ সংরক্ষণ করা গেলে গবেষণাকাজে ভাল হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ের কম্পিউটারগোলোর দ্বারা এটা সম্ভব না। তিনি বলেন যে,
“তথ্য এত দ্রুত গতিতে আসতে থাকে যে, তথ্যটি কি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন কিনা তা মানুষের পক্ষে ধারণা করা সম্ভব না। আর কম্পিউটার প্রোগ্রামও এত দ্রুত কাজ করে না যে সব তথ্যকে সঠিকভাবে যাচাই করে সংরক্ষণ করবে। প্রকৃত পক্ষে এখন এমন কম্পিউটার প্রোগ্রাম প্রয়োজন যা মানুষের মতো সঠিক সিদ্ধান্ত কম্পিউটারের মতো দ্রুতগতিতে করতে পারবে। ”
১৯৬৫ সালে ইন্টেলের কো-ফাউন্ডার একটি ভবিষ্যতবানী করেন যে, প্রতি আঠারো মাসে কম্পিউটারের গতি দ্বিগুন হবে। আর তার এই কথাই পরবর্তিতে সত্য হতে দেখা যায়। জ্যোতি বিজ্ঞানীগণ  আশা করছেন আরো উন্নত মানের দ্রুত গতি সম্পন্ন ও অনেক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন  কম্পিউটারের জন্ম হলে তাদের মহাকাশ গবেষণার গতিও বৃদ্ধি পাবে।

সময়ের চেয়ে পুরানো ব্ল্যাক হোল আবিষ্কার

আমাদের এ মহা বিশ্ব সৃষ্টি হয় আনুমানিক সারে তের বিলিয়ন বছর আগে বিগ ব্যাঙ এর মাধ্যমে । বিগ ব্যাঙ এর ধারনাটা অনেক টা এরকম- মহা বিশ্ব জন্মের আগে খুবই কম আয়তনের এবং বেশি ঘনত্বের  এবং অনেক বেশি তাপমাত্রার ক্ষুদ্র একটি বস্তু ছিল যাতে বিষ্ফোরণ ঘটে এবং সেই বিষ্ফোরনের মাধ্যমে নক্ষত্ররাজী, গ্রহ উপগ্রহ ইত্যাদির সৃষ্টি হয় এবং দিন দিন এই মহা বিশ্ব সম্প্রসারিতই হচ্ছে। কুইন মেরী বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ণাড কার ও ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের এলান কলে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হন যে এই বিগ ব্যাঙ এর আগেও অন্য কোন মহাবিশ্বের উপস্থিতি ছিল। সেখানকার ব্লাক হোল অন্য কোন বিগ ব্যাঙ এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে যা আমাদের মহাবিশ্বের চেয়ে পুরানো।
black-hole
তারা বিগ ব্যাঙ এর আগের অবস্থার নাম দেন বিগ ক্রাঞ্চ এবং বিগ ক্রাঞ্চের আগে মহা বিশ্বের অবস্থা কি ছিল তা অবশ্য বলতে পারেন নি।
কুইনসল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতিবিদ তামারা ডেভিস অবশ্য ভিন্ন কথা বলেন। তিনি মনে করেন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে যদি ভিন্ন ভিন্ন মহা বিশ্ব সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে সেখানকার আলোর গতি, তাপমাত্রা, এমন কি পদার্থ সমুহের আকর্ষণও ভিন্ন হতে পারে। এমন কি সেখানের পারমানবিক গঠণও ভিন্ন হবে। যেহেতু আমরা আমাদের মহাবিশ্বের বাইরে যেতে পারি নাই এবং তাই এই গবেষণা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তবে তিনি এই গবেষণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। তার ভাষায়,
But this kind of research is also very important because it’s only by pushing the boundaries of our current theories that we can find out where the weaknesses are and make progress in figuring out how to solve those weaknesses

পানি সমৃদ্ধ নতুন গ্রহ সুপার আর্থস

বিসমিল্লাহির রহমানীর রাহীম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকের আমি আপনাদের সাথে ভিন্ন রকমের একটা পোষ্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আমাদের সৌরজগতের খুব কাছে পানি সমৃদ্ধ এক গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। ধারণা করা হচ্ছে, পৃথিবীর মতো প্রানী বসবাসের উপযুক্ত এ গ্রহটি। পৃথিবীতে থেকে ৪০ আলোকবর্ষ দূরের এই গ্রহটি আমাদের সূর্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট লোহিত বর্ণের এক নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। নতুন এ গ্রহটির নাম দেওয়া হয়েছে “জি জে ১২১৪বি”।
সৌর জগতের বাইরে এবং অনেক বেশি দূরত্বে থাকার কারনে অনেক তথ্যই অনুসন্ধান সম্ভব হয় নি তার পরেও ধারণা করা হচ্ছে-এটি পৃথিবী থেকে ২.৭ গুন বড় এবং ভর সাড়ে ৬ গুন বেশি। এ গ্রহের তিন-চতুর্থাংশ পানি ও বরফ এবং বাকি একাংশ পাথুরে শিলায় গঠিত। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এটি পানি সমৃদ্ধ সুপার আর্থস। গ্রহটি যে নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরছে তার উপরি ভাগের তাপমাত্রা ২৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নক্ষত্র থেকে এর দূরত্ব ১৩ লাখ মাইল। হিসাব করে দেখা গেছে, এ দুরত্বে থাকা গ্রহটির বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা হবে ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।নক্ষত্র থেকে এর দূরত্ব ১৩ লাখ মাইল।
এটি নিয়ে এ পর্যন্ত মোট দুটি গ্রহ পাওয়া গেল পৃথিবীর মতো। অন্য গ্রহটির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল অক্টোবর ২০০৯ সালে। এর অবস্থান পৃথিবী থেকে ১৫০ আলোকবর্ষ দূরে পেগাসাস নক্ষত্রপুঞ্জে। জি জে ১২১৪ গ্রহটি প্রতি ৩৮ ঘন্টায় একবার তার নক্ষত্রের চারপাশ ঘুরে আসে। গ্রহটির দেখত অনেকটা নিচের মতো হতে পারে-
পোষ্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ, ভাল থাকুন

মহাকাশে রয়েছে অসংখ্য ছন্নছাড়া গ্রহ

বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বিশ্বাস করতেন মহাকাশে অনেক গ্রহই থাকতে পারে যারা কোন নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে না ঘুরে ভাসমান ভাবে আছে। এসব গ্রহ কোন নির্দিষ্ট নক্ষত্র পরিবারের অন্তর্গতও বলা যায় না। মূলতঃ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মহাকর্ষ বলের প্রভাবে এসব গ্রহ বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়ায়। তবে এ বিষয়টি একটি ধারণা হিসেবেই ছিল।
orphan
জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী তাকাহিরো প্রমান করেন বিষয়টি। নতুন গবেষণায় তিনি জানান জুপিটারের চেয়ে ১৫গুন ভরের একটি গ্রহ নতুন একটি নক্ষত্রের  কাছে ভাসমান অবস্থায় আছে। এ ধরনের গ্রহের সংখ্যা নক্ষত্রের সংখ্যার দ্বিগুণ হতে পারে। ১৯৯৫ সালে আমাদের সৌর জগতের বাইরে ৫০০’র বেশি গ্রহের সন্ধান মেলে যারা খুবই কম গতিতে বিভিন্ন নক্ষত্রেন চারদিকে ঘুরছে, যার কথা ১৯১৫ সালেই আইনস্টাইন বলে দিয়েছিলেন।
কোন একটি গ্রহের গতি, তার আস-পাসের মহাকর্ষ বলসহ বিভিন্ন বিষয়গুলোর গানিতিক হিসাব করলেই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব এটি  ছন্নছাড়া কিনা। এ বেপারে অস্ট্রেলিয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও’টলি জানান, We’re only speaking about 10 objects, only one of which has enough data to rule out a host star, or at least rule out a star within ten astronomical units of the planet

মহাবিশ্ব সৃষ্টি আজও কৌতুহলের এক মহাসমুদ্র

প্রগতিশীল বিশ্বে আজ সর্বত্র প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানের জয়োগান। যুগে যুগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে বিজ্ঞানীদের অবতারণা, তাদের বিজ্ঞান চর্চা, তাদের গবেষণার ফলাফল, আবিষ্কার, উদ্ভাবিত তত্ব, তথ্য বিজ্ঞানকে করেছে ঐশ্বর্যপূর্ণ।আজ আমরা যার সুফল ভোগ করছি। বিজ্ঞান আমাদের রহস্য নিবারণের অন্যতম হাতিয়ার। যেকোন সাধারণ ঘটনা থেকে শুরু করে রহস্যময় সৌরমন্ডলের গতি প্রকৃতি বিশ্লেষণম, সবই বিজ্ঞানে বহুল আলোচিত। তারপরও মহাবিশ্বের সৃষ্টি আজও সকলের কাছে রহস্য আর কৌতুহলের কেন্দ্রবিন্দুতে।
মহাবিশ্ব এবং নিজের সম্পর্কে আমাদের কৌতুহল
1197123746824601922yeKcim_earth.svg.medমাহাবিশ্বের অন্যতম বুদ্ধিদীপ্ত প্রাণী হিসেবে আমরা পৃথিবীতে এসেছি। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে চিন্তা করার শক্তি দিয়েছে, কৌতুহল দিয়েছে, এবং কৌতুহল নিবারণের জন্য দিয়েছে পর্যবেক্ষেণ এবং বিশ্লেষণী   ক্ষমতা। পরিস্থিতী অনুযায়ী কার্যপদ্ধতি পরিবর্তন এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য দিয়েছে মানষিক চিন্তাশক্তি এবং মেধা। আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের শক্তিও অসাধারণ।
এই পৃথিবীতে আমার অগমণ একটা সীমাবদ্ধ সময়ের জন্য হলেও মানুষ তার কর্মকান্ডকে পরিচালিত করে অনির্দিষ্ঠ লক্ষে। এজন্যই বংশানুক্রমে পৃথিবী চলেছে আপন গতিতে। আসা যাওয়ার দোলাচলে ক্রমবর্ধমান পথ পাড়ি দিচ্ছে মানব সভ্যতা । তার পরও মানুষের কৌতুহল থেমে নেই,
আমাদের প্রধান কৌতুহল এই মহাবিশ্ব কি? কিভাবে কোথা থেকে এল? আমি কে? কিভাবে, কেন আমার সৃষ্টি হল? পরিবেশের প্রতিটি উপাদান কেন সৃষ্টি হয়েছে, কতদিন চলবে এই মহাবিশ্বের রঙ্গমঞ্চ?
মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধর্মীয় আদর্শ
nw2আমাদের সমাজ বেশ কিছু ধর্মীয় অদর্শের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হচ্ছে। এই মহাবিশ্ব, মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রণ এবং আমাদের কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করার জন্য সকল ধর্মেই অসংখ্য মত, নীতি, আদর্শ এবং প্রথা প্রচলিত আছে। তারপরও এ গুলোই আমাদের প্রধান কৌতুহল। এ বিষয়ে কোন উত্তরই যেন শেষ উত্তর নয়। কোন কর্মকান্ডই যেন শেষ নয়, কোন গবেষণায় ফলাফলই যেন প্রকৃত নয়। তার পরও যেহেতু বিজ্ঞান তথ্য উপাত্ত এবং প্রমাণ বিশ্লেষণ করে, তাই বিজ্ঞানকেই আমাদের কৌতুহল নিবারণের সর্বোত্তম পন্থা হিসেবে মেনে নিতে হয়। বিজ্ঞানীদের মতমত বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করেই যেহেতু বিজ্ঞানের নিত্য পথচলা, তাই মতবিরোধও কম নয়।
আমাদের কৌতুহলের সহজতম সমাধান
nw1আমরা আমাদের কৌতহলকে প্রশমিত করার জন্য নিজস্ব ধারণা বা কোন বিশেষ পুস্তক অথবা কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পত্রের সাহায্য নিয়ে থাকি।হয়তবা আংশিক সফল হতে পারি। আবার অনেকে শুধুমাত্র নিজেস্ব ধারণাকেই প্রকৃত উত্তর বলে গ্রহণ করেন। অনেকে আছেন বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যাকে অনেক জটিল বলে গ্রহণ করেন, তাদের জন্যই বলছি, আমাদের কৌতুহলের আংশিক বিজ্ঞান সম্মত সমাধান দিয়েছেন অমল দাশ গুপ্ত। তিনি তার “পৃথিবীর ঠিকানা” বইটিতে মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্যকে অসাধারণ পন্থায় বিশ্লেষণ করেছেন। বইটিতে মহাবিশ্বের সূচনালগ্ন থেকে ৭২০ কোটি বছরের ইতিহাস তুলে ধরেছেন হয়েছে মাত্র ২৪ ঘন্টার একটি কল্পিত দিবাদৈর্ঘ্যের মাধ্যমে। যেখানে আলোচিত হয়েছে “এইপৃথিবীর সৃষ্টি, মানব সভ্যতার আবির্ভাব, পরিবেশের পূর্ণতা ইত্যাদি”।
মনে করুন ১ ঘন্টা সমান ৩০ কোটি বছর, অর্থাৎ প্রতি মিনিট সমান ৫০ লক্ষ বছর। এখন কল্পনা করুন ঠিক রাত বারোটার সময় সৃষ্টিহল রহস্যময় এই পৃথিবীর, তখন পৃথিবী একটি আবর্তমান গ্যাসীয় বস্তুপিন্ড ছারা আর কিছু নয়। কোন প্রাণের অস্তিত্ব থাকারও কোন প্রশ্ন আসে না, কারণ ঐ ঘূর্ণায়মান বস্তুপিন্ডের তাপমাত্রা ছিল আনুমানিক দশ হাজার কোটি সেন্টিগ্রেড। পৃথিবী আস্তে আস্তে শীতল হয়েছে এবং এক সময় তরল হতে হতে তা জমাট বেধেছে। তৈরি হয়েছে পৃথিবীর আদিমতম সমুদ্র।
vsকিন্তু তখনও প্রাণের অস্তিত্ব সৃষ্টি হয়নি। প্রাণের উৎপত্তি ঘটার মহেন্দ্র ক্ষণটির জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে ভোর ছয়টা পর্যন্ত । ঠিক ভোর ছয়টার সময় আদিম সমুদ্রে কতগুলো অনুবীক্ষণ বিন্দুকে আশ্রয় করে প্রথম প্রাণের জন্ম হয়। তারপর শিরদাঁরওয়ালা প্রাণীর জন্য অপেক্ষা করতে হবে পৌনে নয়টা পর্যন্ত। সকাল নয়টায় উভচর প্রাণীরা মুক্ত বাতাস গ্রহণের উদ্দেশ্যে ডাঙায় উঠে আসে। নয়টা আট মিনিটে জন্ম হয় সরীসৃপের, নয়টা তেইশ মিনিটে ডাইনোসরের, নয়টা পঁচিশ মিনিটে স্তন্যপায়ী আর নয়টা তেত্রিশ মিনিটে জন্ম হয় পাখির। আর সবচেয়ে রহস্যের বিষয় হচ্ছে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ সৃষ্টি হয়েছে পাখি সৃষ্টির ঠিক তেত্রিশ সেকেন্ড পূর্বে।
………………………………………………………………………………..
এখানেই শেষ করছি। সবার জন্য শুভকামনা রইল ।